সুস্বাস্থ্যই মানুষের পরম সম্পদ। বলা হয়ে থাকে—"স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল"। এই সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রয়োজন স্বাস্থ্যসচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং নির্ভরযোগ্য ঔষধ। আশার কথা, বাংলাদেশে ঔষধশিল্প আজ একটি সম্ভাবনাময় ও বিকাশমান খাতে পরিণত হয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রায় আড়াই শতাধিক কারখানায় ২৪ হাজারের বেশি ব্র্যান্ডের ঔষধ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ঔষধ ও কাঁচামাল তৈরি করে, যার মাধ্যমে ২ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং দেশের ৯৮ শতাংশ ঔষধের চাহিদা পূরণ করছে দেশীয় শিল্প। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে ঔষধ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
তবে এই অর্জনের মধ্যেও একটি ভয়ংকর অন্ধকার দিক আমাদের সামনে আছে—ভেজাল ও নকল ঔষধের ছড়াছড়ি। দেশে ঔষধশিল্প যতই উন্নত হোক না কেন, ভেজাল ঔষধের কারণে এই অর্জন হুমকির মুখে পড়ছে।
একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার ভেজাল ও নকল ঔষধ বিক্রি হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের বাজারে বিক্রিত মোট ঔষধের প্রায় ৪০ শতাংশই ভেজাল বা নকল, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ঔষধের সুনাম বাড়ছে, অন্যদিকে দেশীয় বাজারে চলছে চরম নৈরাজ্য। ভেজাল ঔষধের কারণে রোগীদের সুস্থতা তো আসছেই না, বরং দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, মৃত্যুহার, মানসিক চাপ ও আর্থিক ক্ষতি।
এই ভেজাল ঔষধকে একপ্রকার 'নীরব ঘাতক' বললে মোটেই ভুল বলা হবে না। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, ক্যানসার বা হৃদরোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ যদি ভেজাল হয়, তাহলে তা সরাসরি মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য এটি আরো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে ভেজাল ঔষধ একটি পুরনো সমস্যা। অসাধু উৎপাদক ও বিক্রেতাদের দৌরাত্ম্য, ঔষধ প্রশাসনের দুর্বল নজরদারি এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকার কারণে এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বহু ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধের মোড়ক বদলে বা ভুল তথ্য দিয়ে বাজারে সরবরাহ করা হয়। যদিও মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়, তবু তা কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এই ভেজাল ঔষধের বিস্তার আরও বেশি। সেখানে প্রশাসনিক নজরদারি কম এবং সাধারণ জনগণ সচেতন না থাকায় প্রতারকদের থাবা সহজেই বিস্তৃত হয়।
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন—ঔষধের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও গুণমান নিশ্চিত করা। এজন্য সর্বাগ্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে হবে। জনবল সংকট দূর করে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। আধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন ও নিয়মিত গুণমান পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ভেজাল ঔষধ প্রস্তুত ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে গণমাধ্যম, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে। চিকিৎসকদেরও উচিত প্রেসক্রিপশন দেওয়ার সময় সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ঔষধ কোম্পানির নাম উল্লেখ করা এবং রোগীদের নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে ঔষধ কেনার পরামর্শ দেওয়া।
পরিশেষে বলা যায়—ভেজাল ঔষধের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকার, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং জনগণ—সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই মরণফাঁদ থেকে জাতিকে রক্ষা করা সম্ভব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
ভেজাল ঔষধের ছড়াছড়ি বন্ধ করতেই হবে
- আপলোড সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ১০:৩০:১৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৭-২০২৫ ১০:৩০:১৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ